মোহাম্মদ আলী :: মৎস্য ও মৎস্যজাত রপ্তানিকারকদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় করোনাকালীন সময়ে রপ্তানির পরিমাণ কমে গেছে এক-পঞ্চমাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম থেকে মৎস্য রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ২৫৮ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন। এপ্রিলে তা কমে হয়েছে মাত্র ৬৯৮ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন। রপ্তানিকৃত মৎস্যের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি হচ্ছে নানা জাতের চিংড়ি। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মৎস্য রপ্তানিকারক, আড়তদার ও হ্যাচারি মালিকেরা।
হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, হিমায়িত চিংড়ি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। দেশের সবচেয়ে বেশি চিংড়ি চাষ হয় কক্সবাজার, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও যশোর জেলায়। দেশের রপ্তানি বাজারে অন্যতম সম্ভাবনাময় এ খাত চলমান করোনায় ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে। করোনার কারণে সব সেক্টরের সাথে চিংড়ি সেক্টরও হুমকির মুখে পড়েছে। চিংড়ি শিল্পে নেমে এসেছে ধস। অনেক দেশ চুক্তি বাতিল করেছে।
হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, চিংড়ির প্রধান ক্রেতা আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্র। সেখানকার হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর মালিকেরা এসব চিংড়ি আমদানি করে থাকেন। কিন্তু করোনার কারণে বন্ধ রয়েছে রেস্টুরেন্ট। তাই আন্তর্জাতিক ক্রেতারা বহু ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে।
তারা জানান, করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির দাম কমেছে। বিভিন্ন মাছ কোম্পানির প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০টি আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল হয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে এ অঞ্চলের সাদাসোনা খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ি গ্রিস, রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, বেলজিয়াম, জাপান, ফ্রান্স, তাইওয়ান, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, মরিশাস, চীন, ইতালি, ডেনমার্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল, সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানিতে সাফল্য এলেও করোনার কারণে শিপমেন্ট না হওয়ায় চিংড়ি রপ্তানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সিনিয়র সভাপতি আশরাফ হোসেন মাসুদ বলেন, ‘করোনার কারণে একের পর এক মৎস্য রপ্তানি অর্ডার বাতিল হতে থাকে। আমার তিনটি অর্ডার অর্থাৎ তিন কন্টেইনার মৎস্য রপ্তানি অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। এতে আমি আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হই। বর্তমানে কিছু কিছু অর্ডারের অফার আসলেও রপ্তানি মূল্য দিতে চাচ্ছে কম। এতে আমাদের কোনো লাভ হবে না।’
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও রপ্তানিকারক আমিন উল্লাহ বলেন, ‘করোনার কারণে মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মৎস্য রপ্তানি করতে পারিনি। ওই সময়ে আমার ৪টি অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। তবে চলতি জুন মাসে কিছু কিছু অর্ডার আসলে রপ্তানি মূল্য ভাল পাওয়া যাচ্ছে না।’
আমিন উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ মৎস্য রপ্তানি হয়, তার মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি হচ্ছে চিংড়ি। মূলত লোনা পানির বাগদা, মিঠা পানির গলদা ও সামুদ্রিক অন্যান্য জাতের চিংড়ি রপ্তানি হয়ে থাকে।’
জানতে চাইলে মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম থেকে চিংড়িসহ সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মাছ রপ্তানি হয় তিন হাজার ২৫৮ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন। যার মূল্য ১৪১ কোটি ৭০ লাখ ৯৩ হাজার ৪৮০ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি হয় দুই হাজার ৭৩০ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন। যার মূল্য ৯৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯৮ হাজার ৮০০ টাকা। মার্চে রপ্তানি হয় দুই হাজার ২৫১ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন। যার মূল্য ৯৪ কোটি ৫৪ লাখ ১৩ হাজার ৪৩৫ টাকা। এপ্রিল ও মে মাসে করোনার কারণে রপ্তানিতে বড় ধরনের ধস নামে। এপ্রিলে রপ্তানি হয় মাত্র ৬৯৮ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন। যার মূল্য ২৮ কোটি ৩২ লাখ ৬৩ হাজার ২৬৫ টাকা। সর্বশেষ মে মাসে রপ্তানি হয় মাত্র ৯৯৫ দশমিক ৬২ মেট্রিক টন। যার মূল্য ৩৫ কোটি ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৬০ টাকা।’
এদিকে বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক অভিযোগ করে বলেন, ‘রপ্তানিখাতে সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করলেও করোনার কারণে রপ্তানি কমে যাওয়ার অজুহাতে কিছু কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণ প্রদানে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছে রপ্তানিকারকেরা।
পাঠকের মতামত: